সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভেঙে দেওয়া এক কবি

কলকাতা প্রতিনিধিঃ মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম
  • Update Time : সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০২২
  • ৪৪৫ Time View

মুহাম্মদ মফিজুল ইসলাম

ভাঙড়, দক্ষিণ ২৪ পরগণা
পশ্চিমবঙ্গ,ভারত

ক্যালেন্ডারের হিসাবে আরও একটি বছর পার হয়ে গেল। বড় অস্থির এ সময়। দেশের মানুষ, দেশের যুবশক্তি ভুলে যেতে বসেছে তাঁর গৌরবোজ্জ্বল অতীতকে। প্রাণের সকল সম্পদ বিলুপ্ত হতে চলেছে ভোগবাদী অবক্ষয় সভ্যতার অন্তঃসারশূন্য চোখধাঁধানো চাকচিক্য। আর লাগামছাড়া লোভ-লালসা। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্র-উত্তর যুগের পেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে তিনি হলেন সেই কবি, যিনি সাম্যবাদকে জীবনযন্ত্রণা আলোকে উদ্বুদ্ধ করে প্রকৃত মানবতাবাদের দেখে তাঁর যাত্রাপথটি ক্রমশ প্রশস্ত করেছেন। তিনি জ্যৈষ্ঠের প্রমত্ত ঝঞ্ঝা। তাঁর উদাত্ত কণ্ঠস্বরে আদিগন্ত আকাশ অনুরণিত। দেখতে দেখতে নজরুল স্পর্শ করেছেন ১২৩ বছর পূর্তির শুভক্ষণ।

সমাজ জীবনের অবিচার, বৈষম্য ও শোষণের প্রতি তাঁর মর্মস্পর্শী প্রতিবাদ তাঁর কবিতার প্রধান উপজীব্য। নজরুলের কবিতায় যে শুধু সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে ‘ফরিয়াদ’ উচ্চারিত হয়েছে তা নয়, তিনি বিধাতার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধেও উচ্চকণ্ঠ। তাঁর বিশ্বাস, সর্বজয়ী মানব মহিমা প্রতিষ্ঠার পক্ষে বিধাতাই তো সবচেয়ে বড় বাধা। এই কারণে নজরুল হয়ে ওঠেন জনগণের প্রিয় কবি। নজরুলের প্রতিবাদী কলম জ্বলে উঠেছে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির মতো। তিনি হয়ে উঠেছেন শোষিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত ও সর্বহারা মানুষের কবি।

সমাজ চেতনা,সমকালীন গণতান্ত্রিক চেতনা ও সাম্যবাদী প্রত্যয় বারবার ফুটে উঠেছে তাঁর কবিতায়। ফুটে উঠেছে নারীমুক্তির কথা। ফুটে উঠেছে শ্রমজীবী মানুষের শোষণ, বঞ্চনা ও অপমানের কথা। ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও কুসংস্কারের বন্ধন থেকে মানবাত্মার শৃঙ্খল মোচনের কথা— সবকিছুই ব্যপ্ত হয়ে উঠেছে তাঁর কাব্য কথায়। এটা সম্ভব হয়েছে তাঁর মানবতার প্রতি নিবেদিত প্রাণের জন্য।

নজরুল আদ্যান্ত জীবনপ্রেমিক ছিলেন বলেই তাঁর কাব্যে প্রাধান্য পেয়েছে সমসাময়িক জীবন ও জগতের কথা। অর্থাভাব আর অন্নাভাবে তাঁর শিক্ষাজীবন দারুণভাবে বিড়ম্বিত হয়েছে। আমৃত্যু দুঃখই তাঁর একমাত্র সহচর। হয়তো তাই তাঁর ‘দুখু মিয়াঁ’ নামকরণের এখানেই সার্থকতা। শৈশব কাল থেকে তাঁকে জীবনযন্ত্রণার লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে হয়েছে বারবার। জীবিকার সন্ধানে অসম জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। হয়তো তাই সমাজের অভিজাত মানুষের প্রতি একটি প্রতিবাদী মন ও বিদ্রোহী ভাব তাঁর কবি জীবনের শুরু থেকেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। নজরুল তাঁর কাব্যজীবনের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রনাথের সস্নেহ সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। তবে তাঁর ব্যক্তিজীবনে ও কাব্যে রবীন্দ্রনাথ থাকলেও তাঁর কাব্যের প্রধান ধারা ছিল একেবারে স্বতন্ত্র। ধুমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে সমাজের প্রচলিত যতসব বিধি-বিধান ভেঙে চুরমার করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। আবেগ ও উন্মাদনায় সঞ্চিত যুব মানসে এমন আলোড়ন সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, যা প্রচলিত রাজশক্তি, সামাজিক কাঠামো, অর্থনৈতিক বুনিয়াদ, ধর্মীয় অন্ধতা, সংকীর্ণতা ও ভণ্ডামি— সবকিছুকেই আমূল পরিবর্তন করে দেবে। বস্তুত, সমকালের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে এর যথার্থ উপযোগিতা ছিল বলেই পাঠক সমাজে তাঁর কবিতা এত গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। পাঠক সমাজ তাঁর কবিতার প্রতি এত অনুরাগী হয়ে ওঠে। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে নজরুলের আবির্ভাব। স্বাভাবিকভাবেই সমকালীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ঘটনাবলির দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন তিনি। একদিকে রাশিয়ার উত্থান, অন্যদিকে ভারতবর্ষে ইংরেজ বিরোধী আন্দোলন— এই দুইয়ের দ্বারা গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। একথা সর্বজনবিদিত যে, সশস্ত্র বিপ্লবে তাঁর আস্থা ছিল অগাধ।

আবার মুজাফফর আহমেদের সান্নিধ্য তাঁকে সাম্যবাদের দিকে আকৃষ্ট করে। তাঁর যাবতীয় বিদ্রোহ তৎকালীন সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। তাঁর কলম গর্জে উঠেছে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। তাঁর সাম্যবাদ প্রচলিত সাম্যবাদ নয়। বলা যেতে পারে তাঁর সাম্যবাদ মানবতাবাদী সাম্যবাদ।

আবার যেখানে কাজী নজরুলের বিদ্রোহী সত্ত্বা অবলুপ্ত, সেখানে তিনি প্রেমিক, ভাবুক, সৌন্দর্য পিপাসু। এমনকী ভক্তও। প্রেমসঙ্গীত, গজল, শ্যামাসঙ্গীত ও ইসলামী সঙ্গীত রচনাতেও নজরুলের কবি হৃদয় স্বরূপে উদঘাটিত।

১৯২৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে যায় নজরুলকে। শুধু কলকাতা নয়, গোটা বাংলা তখন রক্তাক্ত। ভাতৃঘাতী দাঙ্গার তীব্র ভয়াবহতা তাঁকে ভীষণ ভাবে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেয় তাঁর সহজ-সরল বিশ্বাসকে। আবার পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার আর এক কলঙ্কচিহ্ন নারীর শোষণ, নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।

রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের ,মতো নজরুলের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে নারীমুক্তির আহ্বান। সমাজে নারীর অবমাননায় ব্যথিত নজরুলের মর্মবেদনা ফুটে উঠেছে তাঁর বিভিন্ন প্রবন্ধে। ‘বাংলাদেশের জাতীয় কবি’ কাজী নজরুলের ১২৩তম জন্মজয়ন্তী মহাসমারোহে পালিত হচ্ছে দুই বাংলাতেই। অগণিত মানুষ নজরুল-জয়ন্তী উদযাপনে শামিল হবে। বড় আনন্দের কথা। কিন্তু, নজরুলকে আমরা যথাযোগ্য সম্মান জানাতে পারব তখন, যখন আমরা তার সম্প্রীতির বাণী অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করতে পারব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ‘ভাই’ বলে আপন করে নিতে পারব। নজরুল জন্মজয়ন্তীতে সেটাই হবে আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্ঘ্য। শ্রেষ্ঠ পুষ্পাঞ্জলি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

মুহাম্মদ বদিউল আলম এর সুস্থতা কামনায় কোলাগাঁও ইউনিয়নে দোয়া মাহফিল। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম ১২ পটিয়া আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী জননেতা মুহাম্মদ বদিউল আলম এর সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল শুক্রবার (৭ই এপ্রিল) বাদে মাগরিব পটিয়ার কোলাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন সমূহের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন কোলাগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা আবু ছৈয়দ লালু, মাওলানা জয়নাল আবেদিন, শাহ্জাদা হাজী মাহবুব আলম গরিবী, আবু তাহের, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফি, মোহাম্মদ নাসির, আবদুল রহিম, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন, আবদুল আজিজ, মোহাম্মদ আরমান প্রমূখ। পটিয়ার গণমানুষের নেতা মুহাম্মদ বদিউল আলম এর দ্রুত সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা জয়নাল আবেদিন।

মুহাম্মদ বদিউল আলম এর সুস্থতা কামনায় কোলাগাঁও ইউনিয়নে দোয়া মাহফিল

যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ বদিউল আলম এর রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম ১২ পটিয়া আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী জননেতা মুহাম্মদ বদিউল আলম এর রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল শুক্রবার (৭ই এপ্রিল) বাদে জুমা পটিয়া হযরত আমিরুল আউলিয়া আমিরুজ্জামান শাহ্ দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন আউলাদে আমির বদরোজ্জোদা আমিরী, পটিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক খলিলুজ্জামান আমিরী শিবলু, ব্যাংকার আমির হোসেন ম্যানেজার, কামাল হোসেন আমিরী, সৈয়দ মোদাচ্ছের আমিরী, মুস্তাকিম আমিরী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুরুজ মিয়া, ইমরানুল আলম, মোহাম্মদ ঈসমাইল, পটিয়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক হাসান, পটিয়া পৌরসভা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ্ আমিরী, আবদুল আলম, আবদুল্লাহ আল নোমান, মোঃ ইকবাল, জেলা যুবলীগ নেতা তৌহিদুল আলম জুয়েল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলাম জুয়েল প্রমূখ। পটিয়ার গণমানুষের নেতা মুহাম্মদ বদিউল আলম’র দ্রুত রোগমুক্তি কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন আউলাদে আমির বদরোজ্জোদা আমিরী (মা:জি:আ)

যুবলীগ নেতা মুহাম্মদ বদিউল আলম এর রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল।

দৃষ্টিতে পরিবর্তনশীল চট্টগ্রাম, এই স্লোগান নিয়ে ২০১৬ সালের ৫ই এপ্রিল বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে যাত্রা শুরু হয় আজকের কর্ণফুলী । শুরু থেকেই আজকের কর্ণফুলী র উদ্দেশ্য ছিল বাংলা সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশি সংস্কৃতি ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সঠিকভাবে প্রকাশ করে সমাজ এবং প্রশাসনের সামনে তুলে ধরা। আজ ৮ বছর পদার্পণ করছে চট্টগ্রাম হতে প্রকাশিত আজকের কর্ণফুলী পত্রিকা। এ সম্পর্কে আজকের কর্ণফুলী পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ফোরাম এর সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মুহাম্মদ রিপন বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজকের কর্ণফুলী ও আমাকে ভালোবেসে আজকের উপস্থিতি সকলকে আজকের কর্ণফুলী পরিবারের পক্ষ হতে শুভেচ্ছা জানায়। এই সময় বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক, ও কর্মরত সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিনত হয়। বর্ষপূর্তি অনুষ্টানে শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টলা পোষ্ট এর সত্বাধিকারী সাংবাদিক শিব্বির আহমেদ ওসমান, হারুন অর রশিদ, সিনিয়র সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম, বাংলা টিভির সাংবাদিক মিজান উল্লাহ সমরকান্দি, দিদারুল আলম, এশিয়ান টিভি’র অনুসন্ধানী প্রতিবেদক সাংবাদিক এম. আর. তাওহীদ, সাপ্তাহিক নব অভিযান এর বার্তা সম্পাদক আবুল কাশেম, চট্টগ্রামের পাতা সহ-সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, একে অপু, মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, আব্দুল কাদের রাজু, মাহমুদ হায়দার জীবন, ফয়সাল সিকদার, ডাঃ প্রবীর বড়ুয়া, মিজানুর রহমান, রুপা আক্তার, ইয়াছমিন আক্তার, মোঃ সুমন, হাজ্বী একরাম হোসেন, আব্দুল কাদের প্রমুখ। আজকের কর্ণফুলী ৮ম বর্ষপূর্তি অনুষ্টান শুরুতে পথচারীদের ইফতার দেওয়া আলোচনা সভা ইফতার মাহফিল, বর্ষপূর্তি কেক কেটে আগামী দিনের সুন্দর সুপরিকল্পনা প্রত্যাশা করেন। সার্বিক সহযোগিতা ছিলেন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ফোরাম।

৮ম বছর পদার্পণ করছে আজকের কর্ণফুলী পত্রিকা