আজ মানুষ শুধু ভোটাধিকার বঞ্চিত নয়; মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। “বাংলাদেশ” পৃথিবীর একমাত্র গনতান্ত্রিক দেশ (কাগজে-কলমে) যে দেশে সরকারও নাই বিরোধীদলও নাই। দাদা বাবুদের নীল নকশায় প্রশাসন নির্ভর মেরুদন্ডহীন হয়ে পড়েছে আমাদের “জীবন বাংলাদেশ”। এই প্রেক্ষাপটে যেন ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার চাওয়াটাই মহাপাপ। বৃটিশ শাসনামলে কাজী নজরুল কে বৃটিশ বিরোধী কবিতা প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে কতবার যে জেলে যেতে হয়েছে তার হিসেব নেই, প্রীতিলতা, সূর্যসেনসহ শত শত বীরেরা লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল একদিন স্বৈরশাসক থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করবে বলে। হুম ইতিহাস স্বাক্ষী বৃটিশের উপনিবেশিক শাসন থেকে একদিন মুক্তি মিলে ছিলো কিন্তু যাওয়ার সময় ভৌগোলিক পরিমণ্ডলকে উপেক্ষা করে বৃটিশ সৃষ্ট অনুচর দিয়ে ধর্মীয় বিবেচনায় পাক-ভারত আলাদা হয়। এমন ভাবে দেশ বিভাগ করেছিলো যাতে কমপক্ষে আরও শতবছর পাক ভারতের লোকজন অশান্তিতে থাকে। প্রায় ১২০০ কিলোমিটার এক প্রদেশ থেকে অন্য প্রদেশের দূরত্বে দুটি প্রদেশ মিলে হল পাকিস্তান। এই দেশটাও যে টিকবে না তখনই অনেকেই চিন্তা ভাবনা ছাড়াই বলে দিয়ে ছিলো। ভাষা বিজ্ঞানীরা বলে প্রতি পাচঁ কিলোমিটার অন্তর অন্তর কিছু শব্দ বা ভাষার তারতম্য ঘটে। সেখানে ১২শত কিলোমিটার দূরের পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে পূর্ব পাকিস্তানিদের ভাষাগত বিরাট পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক অতপর মাতৃভাষা রক্ষায় বৃটিশের রেখে যাওয়া শকুনের বাচ্চাদের হাতে শহীদ হতে হয়েছিল আমাদের ভাই ” ভাষা সৈনিক সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতদের মত হাজারো ছাত্রজনতার এবং তাদের রক্তের বিনিময়ে রক্ষিত হয়েছিলো প্রিয় মাতৃভাষা “বাংলা”। মুখের ভাষা কেড়ে নিতে না পেরে পশ্চিম পাকিস্তানিরা নানা ভাবে প্রবঞ্চনা দিতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানিদের। পশ্চিমীরা পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়াতে থাকে। আজব একখান দেশ – একই পরিবারের দুটি সন্তান হওয়া শর্তেও সতীনের ছেলের মত আচরণ পূর্ব পাকিস্তানিদের সাথে। একে একে সব মৌলিক অধিকার থেকে পূর্বদের বঞ্চিত করা শুরু করলো পশ্চিমারা। অবশেষে ১৯৭০ সালে কেড়ে নিলো জনতার শেষ আশার অধিকার ” ভোটাধিকার”। ৭০ এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানিরা সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও ক্ষমতার আসনে বসতে দেয়নি পশ্চিমা স্বৈরশাসকের দল। ফলে যুদ্ধ অপরিহার্য হয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানিদের। লক্ষ লক্ষ মা বোনের ইজ্জত ও লক্ষ লক্ষ আবাল বৃদ্ধ, যুবক, যুবতী ও ছাত্র-ছাত্রীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে ভোটাধিকার রক্ষিত হল সাথে পাক অপশাসন থেকেও মুক্তি পেল পূর্ব পাকিস্তানিরা; প্রতিষ্ঠিত হল লক্ষ লক্ষ তাজা প্রাণের রেখে যাওয়া স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় “বাংলাদেশ”। কিন্তু বৃটিশবীজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় লাখ শহীদের স্বপ্ন বারবার হুঁচোট খাচ্ছিলো। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার যুদ্ধপরবর্তী পূনর্বাসনের দোহাই দিয়ে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করল, গনতন্ত্র হত্যা এবং রাজনৈতিক অধিকার হরন করে প্রতিষ্ঠিত করলো আরেক কালো অধ্যায় ” বাকশাল”। সৃষ্টি কর্তার অশেষ মেহেরবানীতে বাংলার লৌহ মানব, স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের নায়ক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের বীরত্ব ও সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশে সত্যিকারের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়; সাধারণ মানুষ ফিরিয়ে পায় মৌলিক অধিকার। সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ কিন্তু বাংলার মানুষের সুখ বেশিদিন টিকলো না। শকুন দলের উত্তরসূরিদের হাতে শহীদ হতে হয়েছিল রাখাল রাজা, কারিশমাটিক নেতা “জিয়াউর রহমানকে”। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পরবর্তী স্বৈরশাসক ক্ষমতা দখলে নিলেও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এইদেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয় এবং গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পায়। গনতন্ত্রকে সম্মান ও শক্তিশালী করতে বেগম জিয়া জনগণের রায়কে শ্রদ্ধা দেখিয়ে ফলাফল মেনে নিয়ে ক্ষমতা থেকে সরে যায়। তখন সাধারণ মানুষের কাছে ভোটের দিন গুলো ছিলো উৎসবে ভরপুর। কিন্তু ক্ষমতা লোভী, বৃটিশের বীজ, বাকশালির উত্তরসূরীরা ধর্মীয় লেবাস লাগিয়ে ক্ষমতায় বসে। ধর্মীয় লেবাসীরা পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব ও অর্জনকে বিক্রি করে আবারও গনতন্ত্র হত্যা, মানুষের মৌলিক অধিকার হরন করে এবং সর্বশেষ ৭০ এর মত আবারও জনগণের ভোটাধিকার হরন করে নেয়। আবারও মুক্তির আন্দোলন, ভোটাধিকার ফিরিয়ে পাওয়ার আন্দোলন অপরিহার্য হয়ে পরেছে। শহীদ জিয়ার রক্তকে আজও তারা ভয় পায়। তাইতো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শহীদ জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরী প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে নানা ধরনের সাজানো মামলায় জড়িয়ে কোনঠাসা করে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে এবং এদেশের মানুষেদের সত্যিকারের স্বাধীনতার সুফল ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে নেতৃত্ব দানকারী, মৃত্যুঞ্জয়ী নেতা তারেক রহমানকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। জাতির পতাকা খামচে ধরা পুরনো সেই শকুনের দলকে বিতাড়িত করতে ছাত্র ও যুবসমাজকে দায়িত্ব নিতে হবে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলনের ন্যায় “ভোটাধিকার ও গনতন্ত্র রক্ষার” আন্দোলনও সফল হবে। ইনশা আল্লাহ।। এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা অংশ নিয়েছে/নিচ্ছে বিগত আন্দোলন গুলোর মত এটাও ইতিহাস হবে এবং তাঁরা বীরের মর্যাদায় ভূষিত হবে আর যারা এটার বিরোধিতা করবে তারা রাজাকার- আলবদর কিংবা মীর জাফরের মত ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে।।
১৪/০১/২০২১